*শহরে "মেডিকল" এক্সিবিশন উদ্ভোধন করলেন মলয় পিট*




১৫ ফেব্রুয়ারি,শনিবার সকালে কলকাতার বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে বহুল প্রতীক্ষিত "মেডিকল এক্সিবিশন ২০২৫"-এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হল। ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলবে এই স্বাস্থ্য পরিষেবার মহা সম্মেলন, যেখানে দেশ-বিদেশের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের সভাপতি ডঃ মলয় পীট।

এদিন তার উদ্বোধনী ভাষণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজ্য সরকারের তথা মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকারের উদ্যোগে স্বাস্থ্য পরিষেবা কে যেভাবে উন্নত করা হচ্ছে এবং আরো উন্নত করার কথা ভাবা হচ্ছে সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। এখন গ্রামীন হাসপাতালগুলোর যে ভাবে উন্নতি করা হচ্ছে – সেটা আগে কল্পনা করা যেত না।”
রাজ্যের শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরী করতে রাজ্য সরকারের ভুমিকারও প্রশংসা করেন তিনি। মলয় বাবু বলেন, “বিগত কয়েক বছরের রাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য। আমরা লক্ষ্য করছি রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সম্মেলনে শিল্পপতিদের মঞ্চে গুরুত্ব সহকারে বসানো হচ্ছে। অন্যদিকে রাজ্যের মন্ত্রীরা দর্শক আসনে বসে আলোচনা শুনছেন। শিল্প বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার বার্তা দিতে এর থেকে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে? বেকার সমস্যা সমাধান শিল্প স্থাপন ছাড়া সম্ভব নয়, এই উপলব্ধি সরকারের তরফ থেকে করা হয়েছে। এটা খুবই সদর্থক দিক।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের দেশে ও রাজ্যে – দেশের বাইরের শিল্পপতিদেরও বিনিয়োগ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, সেই উপযোগী পরিবেশ তৈরি করার জন্য যে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে – একে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
তিনি জানান, “আমাদের ভাবনা আগামী দু মাসের মধ্যে, রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময় নিয়ে নিয়ে, আমাদের রাজ্যে কিভাবে ইতিবাচক ভাবনার বিকাশ করে শিল্প বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা যায় সে নিয়ে কলকাতায় এক বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।”  
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের উপর বিশেষ জোর দেন তিনি। “সারা বিশ্বে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বিপুল উন্নতি হয়েছে। চীনে একটি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, যেখানে কোন মানুষ নেই, রোবটের মাধ্যমে পুরো হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখানেও মানুষ চিকিৎসা পরিষেবা সুন্দর ভাবে পাচ্ছেন। তাহলে আমরা কেন প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নত করতে পারব না। টেলিমেডিসিন, টেলি-প্যাথলজি, টেলি রেডিওলজি, টেলি আইসিইউ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কে কাজে লাগিয়ে গোটা বিশ্বে আমরা স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারব,” বলেই জানান মলয় বাবু।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে সম্প্রতি হায়দ্রাবাদের টেলি সার্জারির ঘটনা তাকে আরো বেশি করে উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে এই বছর জানুয়ারী মাসেই টেলি-রোবোটিক সিস্টেম ব্যবহার করে ২৮৬ কিলোমিটার দূরত্বে দুটি জটিল হার্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন - যা ভারতে এখন পর্যন্ত রোগী এবং অপারেটিং সার্জনের মধ্যে অর্জিত দীর্ঘতম অপারেশন। চিকিৎসা প্রযুক্তি সংস্থা, এসএসআই লিমিটেড দ্বারা তৈরি, এসএসআই মন্ত্র নামে পরিচিত এই সার্জিক্যাল-রোবোটিক সিস্টেমটি ভারতে প্রথম এই ধরণের সিস্টেম।
মলয় বাবু বলেন, “আমার পরিকল্পনা আগামী দু'বছরের মধ্যে বোলপুরের একটি পিজি কোর্স সমতুল্য কোর্স শুরু করা। যেখানে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের ছাত্র-ছাত্রী ১০ মাস অন জব প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং ও দুমাস থিওরি ট্রেনিং করে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্স সম্পূর্ণ করবেন।”
এই মেডিকেল প্রদর্শনীতেও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ভিত্তিক রোগ নির্ণয়, রোবোটিক সার্জারি, টেলি-মেডিসিন পরিষেবা এবং জেনেটিক গবেষণার মত নানা দিক নিয়ে দেশি-বিদেশি নামী সংস্থাগুলি তাদের আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবার প্রদর্শনী করছে।  
সঞ্জয় মুখার্জি, এমডি, এসআই সার্জিক্যাল বলেন, “স্বাস্থ্য পরিষেবার নতুন নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে এই প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এই এক্সিবিশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবেই স্বাস্থ্য খাতে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজবেন।”
অল বেঙ্গল প্রাইভেট নার্সিং হোম অ্যান্ড হসপিটাল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য যুগ্ম সম্পাদক ও বীরভূম জেলা সম্পাদক তাহের শেখ জানান, “রাজ্যের ২৫০০ -এর বেশী বেসরকারি নার্সিং হোম ও বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার, কতৃপক্ষ ছাড়াও আমাদের রাজ্য সহ সারা দেশের প্রচুর চিকিৎসকরা এই মেডিকল এক্সিবিশন ২০২৫ এ অংশ নেবেন।”
"মেডিকল এক্সিবিশন ২০২৫" নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্য খাতের একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন হয়ে উঠেছে। আগামী তিন দিন ধরে এই প্রদর্শনী স্বাস্থ্য পরিষেবা জগতের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাসেব বলেই মনে করছেন অংশগ্রহণকারীরা।

Comments

Popular posts from this blog

Mariyam Ayesha – Fashion ModelThe Role of Fashion Models in the Modern Fashion Industry

পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে ইনকাম ট্যাক্স স্পোর্টস এন্ড রিক্রিয়েশন ক্লাব,পশ্চিমবঙ্গ

জাপান ক্যারাটে ইন্ডিয়ার বার্ষিক গ্রেটেশন এক্সামিনেশন